কোটা সংস্কার আন্দোলন নান্দাইলের নিহত তিনজনের পরিবারকে খাদ্য সামগ্রী দিল ‘বসুন্ধরা শুভসংঘ’

মো. জোবায়ের(১৫),জামান মিয়া(১৭) ও হুমায়ুন কবির(২০)। তিনজনের বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার ভিন্ন গ্রামে। তাঁরা তিনজনই জীবিকার তাগিদে ঢাকা ও নরসিংদীতে কাজ করতো। তাদের মধ্যে দুইজন দোকানের কর্মচারী ও আরেকজন একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতো। হত দরিদ্র ওই তিনজনই মাস শেষে আয়ের একটা অংশ বাড়িতে পাঠাতো। চলতো সংসার। কিন্তু এখন আর তাদের আয় বাড়িতে আসবে না। গত ২০ ও ২১ জুলাই তিনজনই কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। এরপর হাসপাতাল ও সড়কের পাশে পড়ে থাকা লাশ উদ্ধার করে বাড়িতে এনে তড়িঘড়ি দাফন করে ফেলে। ভয় আতঙ্ক ও ঝামেলা এড়াতে তিন পরিবারের কেউই এখন মুখফুটে বিচার চাচ্ছেন না। তবে চাপা ক্ষোভ ও কষ্ঠ নিয়ে তিন জনের মায়েদের কান্না কেউ থামাতে পারছে না। সন্তান হারা তিন মায়েদের কান্না এখন স্ব স্ব এলাকায় আলোচনার বিষয়বস্তু।

এই তিন পরিবারের পাশে দাড়িঁয়েছে ‘বসুন্ধরা শুভসংঘ’ নান্দাইল উপজেলা শাখা। আজ সোমবার সকালে নান্দাইল উপজেলার চন্ডীপাশা নতুন বাজার এলাকায় ওয়াদুদ মার্কেটের নিচ তলায় তাঁদের পরিবারের স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয় এক বস্তা চাল ও তেল। ওই সময় উপস্থিত ছিলেন গাজীপুরের সাইনবোর্ডের ভুষির মেইল মেম্বার বাড়ি এলাকায় নিহত দোকান কর্মচারী জোবাইদের বাবা আজিজুল ইসলাম কুসম,ঢাকার যাত্রাবাড়িতে নিহত দোকান কর্মচারি হুমায়ুনের চাচা মো. দুলাল মিয়া ও নরসিংদীতে নিহত মো. জামানের বড় ভাই রায়হান মিয়া। এ সময় রায়হান বলেন,দীর্ঘ দিন পার হলেও আমার ভাইয়ের খবর কেউ নেয়নি। কিন্তু দেশের শীর্ষ শিল্প প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা মানবিকতা দেখিয়ে যেভাবে আমাদের খবর নিয়েছে তার জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। জোবাইয়েদের বাবা আজিজুল ইসলাম কুসুম বলেন,আমি কোনো ধরনের সাহায্যের আশা করছি না। শুধু চাই একটা বিচার। যেটা পাইলে আমার ছেলের আত্ম শান্তি পাইতো। অহন আর কিছুই চাই না। তারপরও আপনেরা(বসুন্ধরা শুভসংঘ) যে মনে করছুইন তার জন্য ধন্যবাদ। এইডাই আমার কাছে দোয়ার মতো। নিহত হুমায়ুনের চাচা দুলাল মিয়া বলেন,হের(হুমায়ুন) মা-বাপ অসুস্থ্য হইয়া বিছনাত পইর‌্যা রইছে। খালি ছেড়া ছেড়া(ছেলে) করে। অহন তো বুড়া মা-বাবারে লইয়া আমরাই শঙ্কায় আছি। কোন সময় কি হয় কঅন যায় না। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা শুভসংঘ নান্দাইল উপজেলা শাখার সভাপতি সোহাগ আকন্দ.সাধারন সম্পাদক মোখলেছুর রহান হৃদয়,শুভ ও বিজয়।

জানা যায় গত ২০ জুলাই গাজীপুরের নাইনবোর্ড এলাকায় নিজের দাকানে ব্যবসা করার সময় গুলিতে নিহত হন হুমায়ুন কবির। তার বাড়ি নান্দাইল সদর ইউনিয়নের পূর্ব সাভার গ্রামে। অপর দিকে যাত্রাবাড়ির শনির আখড়ায় দোকান থেকে মালিকের বাসায় খেতে যাওয়ার সময় যাত্রাবাড়ি ব্রিজের নিচে গুলিতে নিহত হন জোবাইদ আহম্মেদ। তিনি উপজেলার চন্ডীপাশা ইউনিয়নের চামারুল্লা গ্রামে এবং নরসিংদীতে একটি ডাইং ফেক্টরীতে কাজ করছিলেন জামান মিয়া। আন্দোলন চলাকালে তিনি বের হয়ে দেখতে যাওয়ার সময় গুলি বিদ্ধ হয়ে নিহত হন। তিনি উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের দেউল ডাংরা গ্রামে। পরে বিনা ময়না তদন্তেই তাঁদের লাশ গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। কিন্তু এরপর কয়েকদিন পুলিশের নজরধারী থাকলেও এখন আর কেউ খবর নেয়না।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *