‘বসুন্ধরা গ্রুপ মানুষকে মানুষ হিসেবে তৈরি করার ব্রত নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে’
ইষ্ট ওয়েস্ট মিডিযা গ্রুপের পরিচালক, কালের কন্ঠের প্রধান সম্পাদক ও দেশবরেণ্য কথা সাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন বলেছেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ’ দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে। সেই ধারাবাহিকতায় গ্রুপের পক্ষ থেকে সারাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। একই সাথে অস্বচ্ছল পরিবারের নারীদের স্বাবলম্বী করতে সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও চালু করা হয়েছে। এই কাজে সহায়তা দিচ্ছে ‘শুভ কাজে সবার পাশে’ এই প্রত্যয় নিয়ে বসুন্ধরা শুভ সংঘ। তিনি বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপ মানুষকে মানুষ হিসেবে তৈরি করা এবং শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার একটা ব্রত নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।’
তিনি শনিবার দুপুরে গাইবান্ধা সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্রের ভাঙ্গণে বিপর্যস্ত কামারজানিতে বসুন্ধরা শুভ সংঘ স্কুল ও সংলগ্ন শুভ সংঘ সেলাই প্রশিক্ষন কেন্দ্র পরিদর্শন ও সুবিধাভোগিদের সাথে মতবিনিময় করতে গিয়ে এ সব কথা বলেন। পরে সকলকে নিয়ে চড়–ইভাতির আয়োজন করা হয়। ৬০ শিক্ষার্থী, ২৫ সেলাই প্রশিক্ষনার্থী ও শুভ সংঘের কর্মীরাসহ অভিভাবকরা এত অংশ নেন।
কালের কন্ঠের প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন স্কুল চত্বরে পৌঁছলে শিক্ষার্থী ,এলাকাবাসী ও শুভসংঘের কর্মীরা তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত করেন। তাকে নিজেদের মধ্যে পেয়ে উচ্ছসিত হয়ে ওঠে শিশুরা। তার হাত থেকে পাওয়া স্কুলের নতুন পোশাক ও জুতো পড়ে ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে তাঁরা শুভ সংঘের স্বপ্নদ্রষ্টাকে বরণ করে নেয়। তাদের পেছনেই অস্বচ্ছল সেলাই প্রশিক্ষনার্থী ২০ নারী আনন্দিত মুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ‘গাইবান্ধার কামারজানির গো ঘাট সংলগ্ন এই এলাকায় কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। শিশুদের পাঠদান নিয়ে দরিদ্র বাবা মা চিন্তিত ছিলেন। তাই বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় কামারজানি এলাকায় বসুন্ধরা শুভসংঘের পক্ষ থেকে এই স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। একই সাথে দারিদ্র দূরিকরণে সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নারীরা স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে কাজ শিখছেন। তাদের প্রশিক্ষণ শেষে একটি করে সেলাই মেশিন উপহার দেওয়া হবে।’
তিনি আরও জানান, ‘বসুন্ধরা গ্রুপের বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় জমি কিনে নিজস্ব ভবন তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে। এই ভবনগুলোতে বসুন্ধরা শুভ সংঘ স্কুল, কম্পিউটার ও সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও একটি করে সমৃদ্ধ পাঠাগার থাকবে। গত ক’দিনে বগুড়া জয়পুরহাট এলাকা ঘুরে দেখা হয়েছে। কামারজানিতেও এ রকম ভবন তৈরী হবে। সে জন্য ঘুরে দেখা হয়েছে। শুভ সংঘের সব ধরণের কার্যক্রমও এ সব ভবন থেকে পরিচালনা করা হবে।’
ইমদাদুল হক মিলন অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তিনি প্রতিটি অঞ্চলে গিয়ে সকলকে একটি বার্তা দিতে চান। বার্তাটি হল অস্বচ্ছল পরিবারের মেধাবী সন্তানদের পড়াশোনা যাতে অর্থের অভাবে বন্ধ না হয়ে যায় সেদিকটি বসুন্ধরা গ্রুপ দেখবে। তাদের সহায়তায় শুভ সংঘ এই কাজটি বাস্তবায়ন করবে। দরিদ্র পরিবারের মেধাবীদের লেখাপড়ার সব দায়িত্ব শুভ সংঘ বহন করবে। তিনি আরও জানান, এই কর্মযজ্ঞের রূপকার বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান । তিনি সারাদেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠির মানুষকে স্বাবলম্বী করে তুলতে, স্কুল গড়ার কাজে সর্বোচ্চ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন। যে কোন দূর্যোগে সারাদেশের হাজার হাজার মানুষ তাঁর দেওয়া খাদ্য, কম্বল পাচ্ছে। ভুমিহীদের জন্য গৃহ নির্মাণ ও অসংখ্য মালামালসহ দোকানঘর নির্মানের কাজটিও তিনি করে চলেছেন। তার নির্দেশনায় বসুন্ধরা গ্রুপ দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করে। আমরা দেশের দারিদ্র দূরীকরণের জন্য কাজগুলো করছি। মানুষকে শিক্ষিত করে তোলার কাজও চলছে। শত শত শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। বসুন্ধরা গ্রুপ মানুষকে মানুষ হিসেবে তৈরি করা এবং শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার একটা ব্রত নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।’
বসুন্ধরা শুভ সংঘ স্কুলের প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী বিপাশা , শহীদ, নাইমা, সুমাইয়ারা জানাল, ‘স্যারের দেওয়া পোশাক, জুতো , ব্যাগ পায়্যা মন ভরি গেল। হামার ঘরের এই ইস্কুলটা না থাকল্যে গত দু’বছর ধরিয়্যা পড়াশুনার সুযোগ পালাম না হয়।’
অভিভাবক আশফি আক্তার বলেন, ‘মিলন স্যার গত বছর যা যা বলে গিয়েছিলেন সেই সব প্রতিশ্রতি পূর্ণ করলেন। এখন আমরা বসুন্ধরা স্কুলের উপর সন্তানদের দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিন্ত।’
শুভ সংঘের কেন্দ্রীয় পরিচালক জাকারিয়া জামান জানালেন, ‘এই অঞ্চলের ১ থেকে দেড় কিলো মিটারের মধ্যে কোনো স্কুল নেই। বসুন্ধরা শুভসংঘের উদ্যোগে গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের গোঘাট এলাকায় গত বছর সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের জন্য বসুন্ধরা গ্রুপের অর্থায়নে এই স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়। স্কুলটিতে শিশু ও প্রথম শ্রেণীতে ৬০ শিক্ষার্থীকে পাঠদান করা হচ্ছে। এ স্কুলের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর পরিবারের অভিভাবকরা শ্রমজীবি। এসব শিক্ষার্থীরা আগে কোন স্কুলে লেখা পড়া করত না। বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুলে বিনামুল্যে পাঠদান করা হচ্ছে। তাদের ভবিষ্যত গড়ে দেওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বসুন্ধরা গ্রæপ। পাশাপাশি সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটিও ধারাবাহিকভাবে পরিচালনার পরিকল্পনা চালানো হচ্ছে।’
সমগ্র অনুষ্ঠান সমন্বয় করেন শুভ সংঘের জেলা উপদেষ্টা আসিফ আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান আতিক, জয় কুমার দাস, আলাদিন আলিফ, মাহবুবুর রহমান রণিসহ কেন্দ্র থেকে আসা প্রতিনিধিরা।