গলাচিপায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ রাসেলের পরিবারকে বসুন্ধরা শুভসংঘের খাদ্য সহায়তা
গলাচিপায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে শহিদ মো. রাসেল মাহমুদের পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিলেন বসুন্ধরা শুভসংঘ। মঙ্গলবার বেলা ১২ টায় উপজেলার চরকাজল ইউনিয়নের ছোট চরশিবা রাসেলের পরিবারকে এ খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, জেলা সমন্বয়কারী সাইমুন রহমান, বসুন্ধরা শুভসংঘের উপজেলা শাখার সদস্য মো. মিজানুর রহমান, ইসলামি শাসনতন্ত্র আন্দোলনের চর কাজল ইউনিয়নের সভাপতি মো. জাহিদুল ইসলাম, চরশিবা আবদুস সালাম আকন আইডিয়াল স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক মো. জামাল হোসেন, শুভসংঘের সদস্য বায়েজিদ হোসেন, মো. রাহাত খান, মো. আমিনুল ইসলাম, মো. ইমাম হোসেন, আবু সালেহ পন্ডিত প্রমুখ।
গলাচিপা সদর থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে চর কাজল সোমবাড়িয়া বাজার। বাজার থেকে একটি ফসলের ক্ষেতের মধ্যে চার দিকে পানি আর মাঝখান মাটির ভিটিতে টিনের চৌচালা একটি ঘর। এ ঘরেই বসবাস করতেন গত ৫ আগস্ট পুলিশের গুলিতে শহিদ হন মো. রাসেল মাহমুদ। ঢাকার কেরানিগঞ্জের সোনারগাঁও কলেজের ছাত্র। বাবা ঢাকাতে দিনমজুরের কাজ করতেন। সাথে বড় ভাই মিরাজ এলাকায় কৃষি কাজ করেন। বাবা ও বড় ভাই এ দুজনের আয় দিয়েই সংসারের খরচ চলত। আর রাসেল প্রাইভেট পড়িয়েই নিজের পড়াশোনার খরচ চালাত। পড়াশোনা করে একটা চাকরি করে অভাবের সংসারের হাল ধরার ইচ্ছে ছিলো। কিন্তু নিয়তি রাসেলের সে আশা পূরণ করতে দেয়নি। আগস্টের স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে ৫ তারিখ ঢাকার যাত্রাবাড়ি পুলিশের গুলিতে রক্তাক্ত দেহটা লুটিয়ে পড়লো পিচঢালা রাজপথে। পাশে থাকা সতির্থরা দ্রুত ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাসেলকে মৃত ঘোণা করে এবং মর্গে রেখে দেয়। পরেরদিন ৬ আগস্ট বাবা আবু সালেহ খবর পেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে সনাক্ত করে রাসেলের লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়ি গলাচিপা চর কাজলের ছোট চর শিবা গ্রামের বাড়িতে স্থানীয় ঈদগাহ সংলগ্ন কবরস্থানে দাফন করা হয়।
রাসেলের মা রাশিদা বেগম বলেন, আমি সবাইকে দেখি কিন্তু আমার রাসেলেরে দেহিনা। গত ঈদের পর চাউল ভাজা, মুরারা ( মুরগির) মাংস, মুড়ি লইয়া গেছে। আমার পোলাডা ওই সময় নিজের ভাত বাইররা খাওয়াছি। যদি জানতাম ওই সময় আমার বাবার লগে শ্যাষ দেহা– হেলে বুকে জড়িয়ে রাখতাম। ‘ কথাগুলো বলতে বলতে নিস্তেজ হতে যান রাসেলের মা রাশিদা বেগম।
রাসেলের বাবা আবুল হোসেন বলেন, ওই দিন ( ৫ আগস্ট) আমি ঢাকায় দিন মজুরের কাজে ব্যস্ত ছিলাম। আমার গ্রামের বাড়িতে রাসেলের নানা জাহিদ হোসেনের কাছে ঢাকা থেকে ফোন করলে সে আমাকে জানায়। তখন ঢাকা মেডিকেলে অনেক খোজাখুজি করে মর্গে লাশ পাই।
নানা জাহিদ হোসেন বলেন, রাসেল অত্যন্ত বিনয়ী একটি ছেলে ছিলো। ওর খুব ইচ্ছে ছিলো পড়াশোনা করে একটা চাকরি করার। বসুন্ধরা শুভসংঘ অসহায় এ পরিবারের পাশে দাড়িয়ে মানবিকতার পরিচয় দিয়েছে। আমরা আশা করবো এভাবেই অসহায়দের পাশে থাকবে বসুন্ধরা শুভসংঘ।