বগুড়ার শেরপুরে হতদরিদ্র দুই পরিবার পেলেন বসুন্ধরার একমাসের খাদ্য সহায়তা
মজিবর সেখ পেশায় একজন রিকসা চালক। প্রতিদিন শহরে রিকসা চালিয়ে যে টাকা আয় করেন তা দিয়েই সংসার চালান। কিন্তু চলমান ছাত্র আন্দোলনে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তিনি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রিকসা নিয়ে বের হলেও চালাতে পারছেন না। ফলে আয়-রোজগার একেবারেই নেই বললেই চলে। তাই সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। এমনকি তিনবেলা খাবার জোগার করতে পারছেন না। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দিন কাটছে অনাহারে-অর্ধহারে। এছাড়া সখিনা বেওয়ার একই অবস্থা। সংসারের একমাত্র উর্পাজনক্ষম ছিলেন তাঁর স্বামী। কিছুদিন আগে তিনি মারা যান। এরপর থেকে দুই মেয়েকে নিয়ে খুবই অর্থকষ্টে রয়েছেন। প্রতিদিন খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন তারা। এমন খবর পেয়ে ওই দুই পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন বসুন্ধরা শুভসংঘ। রবিবার (০৪আগস্ট) বিকেলে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার রিকসা চালক মজিবর সেখ ও হতদরিদ্র সখিনা বেওয়ার হাতে বসুন্ধরা শুভসংঘের পক্ষ থেকে তুলে দেওয়া হয় একমাসের খাদ্য সামগ্রী।
খাদ্যসহায়তার প্যাকেটে ছিল পনের কেজি চাল, এক লিটার তেল, দুই কেজি আটা, এক কেজি ডাল, এক কেজি হুইল সাবার, এক কেজি চিনি, এক কেজি আলু, দুই কেজি পিয়াজ, হলুদ ও মরিচ প্যাকেট ও এক কেজি লবন।
এই খাদ্য সহায়তা পেয়ে তাদের মুখে ফুটে উঠে হাসির ঝিলিক। শহরের স্যানালপাড়াস্থ একটি সম্মেলন কক্ষে ওই বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বসুন্ধরা শুভসংঘ শেরপুর উপজেলা শাখার সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুল হাই বারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শেরপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুল আলীম, শরীফ আহম্মেদ, দৈনিক কালেরকণ্ঠের শেরপুর প্রতিনিধি আইয়ুব আলী, বসুন্ধরা শুভসংঘের উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের, সাংগঠনিক সম্পাদক ওমর ফারুক, সদস্য গোলাম রব্বানী, হাবিবুর রহমান পান্না প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বক্তারা বর্তমান পরিস্থিতিতে দিনমজুর, শ্রমজীবি ও নি¤œআয়ের মানুষের অবস্থা খুবই দুর্বিষহ। নিত্যপণ্যের দামও তাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। তাঁরা খুবই মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। ঠিক সেসময় বসুন্ধরা শুভসংঘ তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। খাদ্য সহায়তা নিয়ে হাজির হয়েছেন তাদের সদস্যরা। এই কাজের ভুয়সী প্রশংসা করেন তারা।
খাদ্য সহায়তা পাওয়া মজিবর সেখ বলেন, স্ত্রী-দুই ছেলে, দুই মেয়ে সন্তান মিলে তার ছয় সদস্যের সংসার। রিকসা চালিয়ে যে টাকা আয় করেন, তা দিয়েই পরিবারের সদস্যদের মুখে দু’মুঠো ভাত তুলে দেন। কিন্তু বেশকয়েকদিন ধরে ছাত্র আন্দোলনের কারণে রিকসা নিয়ে শহরে যেতে পারছেন না। তাই খুবই কষ্টে খেয়ে না খেয়ে দিনা পার করছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে না চাইতেই বসুন্ধরা শুভসংঘ আজ আমাকে যে সাহায্য করলেন তাতে আমার খুবই উপকার হলো। ছেলে-মেয়ে, স্ত্রীকে নিয়ে কিছুদিন চলতে পারবো। আল্লাহর কাছে দোয়া করি বসুন্ধরা শুভসংঘের সবারই যেন মঙ্গল হয়, দীর্ঘায়ু দান করেন। একইভাবে সখিনা বেওয়া ব্যাগভর্তি খাদ্য সহায়তা পেয়ে আনন্দে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে ছোট ছোট দুই মেয়েকে নিয়ে অনাহারে-অর্ধহারে দিন পার করছি। প্রতিদিন অন্যের বাড়িতে ঝি-য়ের কাজ করে যে খাবার পাই তা সবাই ভাগ করে খাই। ব্যাগভর্তি খাদ্য সহায়তা পেয়ে খুশিতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। অনেকদিন একসঙ্গে এতগুলো খাদ্যপণ্য দেখেননি বলে মন্তব্য করেন তিনি।