বাঞ্ছারামপুরে সেলাই মেশিন বিতরণ বসুন্ধরার ডানায় ভর করে উড়াউড়ি করা যত স্বপ্ন

 

ওরা এসেছেন সেলাই মেশিন নিতে। সংখ্যায় ৫০ জন। এর মধ্যে প্রায় ২০ জনের মতো শিক্ষার্থী। প্রধান অতিথি তাঁর আলোচনায় ঘোষণা দিলেন যে, এখানে যারা শিক্ষার্থী আছে তাদের পড়ালেখায় দায়িত্ব নিবে বসুন্ধরা গ্রুপ। কথামতো তালিকা হলো। তাদেরকে মাসিক বৃত্তি দেওয়ার প্রাথমিক কাজও শেষ করা হলো।
ঘোষণায় বেশ উল্লাসিত সিনহা হক সায়মা। এইচএসসি পরীক্ষার্থী ওই শিক্ষার্থীর বাবা-মা থেকেও নেই। নানার বাড়িতে বেড়ে উঠা। সেলাই মেশিন থেকে হওয়া আয় পড়ালেখার কাজে লাগানোর কথা ভাবছিলো সায়মা। এরই মধ্যে বৃত্তির ঘোষণায় সে বেশ খুশি, ‘আমার পড়ালেখায় এখন দ্বিগুন উৎসাহ পাবো। আমি বসুন্ধরা গ্রুপের কাছে কৃতজ্ঞ।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে বসুন্ধরা গ্রুপের উদ্যোগে শনিবার ৫০টি সেলাই মেশিন দেওয়া হয়। এ উপলক্ষে বসুন্ধরা শুভসংঘ আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের পরিচালক ও কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন। অনুষ্ঠান চলাকালীন প্রখ্যাত এ সাহিত্যিক বসুন্ধরা গ্রুপের হয়ে শিক্ষার্থীদেরকে বৃত্তি দেওয়ার ঘোষণা দেন ও অনুষ্ঠান শেষে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন।

আলোচনা হলো বসুন্ধরা স্বপ্ন দেখে, স্বপ্ন দেখায়, স্বপ্নের বাস্তবায়ন করে। চাওয়ার আগেই যেন ওরা মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসে। দরিদ্র মানুষকে সাবলম্বী করা, অশিক্ষিতদেরকে শিক্ষার আলোয় নিয়ে আসা, শিক্ষার্থীদেরকে বৃত্তি প্রদানসহ দেশব্যাপি নানা কর্মসূচি পালন করে বসুন্ধরা গ্রুপ।
উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বসুন্ধরা গ্রুপের উপদেষ্টা ময়নাল হোসেন চৌধুরী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহা. আবুল মুনসুর, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. দুধ মিয়া, সহকারি কমিশনার (ভ‚মি) মো. নজরুল ইসলাম, বাঞ্ছারামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মহিউদ্দিন। কালের কণ্ঠের বাঞ্ছারামপুর উপজেলা প্রতিনিধি মো. চান মিয়া সরকারের সভাপতিত্বে এতে শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, বাঞ্ছারামপুরের সাংবাদিক এম এ আউয়াল, আশেক এমরান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। স্বাগত বক্তব্য দেন উপকারভোগী শিক্ষার্থী মেহনাজ আক্তার।

উপকারভোগীদের মধ্যে গৃহপরিচারিকা ফিরোজা বেগম জানান, বসুন্ধরা গ্রুপ তিন মাস ট্রেনিং শেষে এখন একটি সেলাই মেশিন দিয়েছে। স্বামীহীন পরিবারে এখন এ সেলাই মেশিনকে ঘিরে তার অনেক স্বপ্ন। চলার একটি পথ তৈরি করে দেওয়ায় তিনি বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বেবি আক্তার নামে এক নারী জানান, সাত বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর এক মেয়েকে নিয়ে সংসারে যেন অন্ধকার নেমে আসে। সেই সংসারে এখন আলো জালিয়ে দিলো বসুন্ধরা গ্রুপ। প্রশিক্ষণ থাকায় এখন তিনি সেলাইয়ের কাজ করে সংসার চালাতে পারবেন।
সভাপতির বক্তব্যে ময়নাল হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘বাঞ্ছারামপুরের জন্য ঠিক যতটা করা দরকার সেটা করা হয়ে উঠেনি। তবে সুযোগ আছে করার। আমরা করবো। এখন বাঞ্ছারামপুরসহ আশেপাশের এলাকার ৯৮ মাদরাসায় প্রতিমাসে টাকা দেওয়া হয়। ২৬ হাজারের বেশি মানুষকে সুদমুক্ত ঋণ দিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ।’ সেলাই মেশিনের যত্ন নেওয়ার জন্য তিনি উপকারভোগীদের প্রতি অনুরোধ করেন।

সাহিত্যিক ও সাংবাদিক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ‘দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে বসুন্ধরা গ্রুপ। দেশে আরো ব্যবসায়ি গ্রুপ থাকলেও তারা সেটি করে বলে চোখে পড়ে না। বসুন্ধরা গ্রুপ প্রতিমাসে ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকার মতো সহায়তা দিয়ে থাকে। বসুন্ধরা যে সুদবিহীন ঋণ দেয় সেটা পৃথিবীর কোথাও নেই।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের মোট ৩৫টি সেলাই মেশিন কেন্দ্র রয়েছে। ২০টা স্কুল আছে যেসব এলাকায় মানুষ খুব একটা যায় না। শুভসংঘের টিম এসব স্কুলে নিয়মিত তদারকি করে। বসুন্ধরার দেওয়ার সেলাই মেশিন জীবনের দরজা খুলে দিচ্ছে।’ সকল কাজে নারীদের এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যে দেশের নারীরা এগিয়ে আসে সে দেশকে কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারে না।’

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *