“অপুর ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন বাঁচাতে এগিয়ে এলো বসুন্ধরা শুভসংঘ”
দিনমজুর বাবার সন্তান অপু দাসের চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে এলো বসুন্ধরা শুভসংঘ। ১৮ফেব্রুয়ারী দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকায় অপুর চিকিৎক হওয়ার পথে বাধা দারিদ্র্য সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি দেখেই কালের কণ্ঠ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন বসুন্ধরা শুভসংঘের মাধ্যমে এই ঘোষণা দেন।
গত সোমবার বিকেলে এই খবর পৌঁছে দিতে শুভসংঘের পক্ষে কালের কণ্ঠ প্রতিনিধি হাজির হন মনিরামপুর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গা খানপুর গ্রামের ঋষি পল্লীর দিনমজুর অসিত দাসের বাড়িতে। ছোট্ট একটি টিনের ঘর সেখান থেকে বেরিয়ে এলেন অপু দাস।মা-বাবা কেউ বাড়িতে নেই। সংবাদ পেয়ে বাড়িতে আসলেন অপুর মা সাধনা রাণী দাস । তিনি পাশের বাড়িতে পুরানো টিউব-টায়ার কেটে গ্যাসকেট, ফিতা,মোড়া তৈরীর বিভিন্ন কাজ করে অসচ্ছল সংসারে সহযোগিতা করেন। সংবাদ পেয়ে অপুর বাবা অসিত দাস বড়িতে আসলেন। তিনি মনিরামপুর বাজারে রাস্তার পাশে বসে জুতা পালিশ ও সেলাইয়ের কাজ করেন।
অপুর মুখ মলিন। অপুর মা-বাবাকে ডেকে বলা হলো বসুন্ধরা শুভসংঘের এগিয়ে আসার কথা। তখন তাদের মুখে বেরিয়ে এলো হাসির রেখা,সে যেন এক অন্যরকম অনুভূতি। তাদের মন থেকে ছেলের লেখাপড়া খরচের শংকা দূর হয়েছে।
অপু দাস উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা খানপুর গ্রামের ঋষি পল্লীর অসিৎ দাস ও সাধনা দাসের ছেলে। দ্ইু ভাইয়ের মধ্যে অপু বড়। অপু দাস ছোট বেলা থেকেই খুব মেধাবী। পড়া-লেখার প্রতি প্রচন্ড আগ্রহ তার। ছেলের আগ্রহ দেখে পিতা-মাতা কষ্ট ক্লেশ করে দুই ছেলেকে লেখাপড়া শিখাচ্ছেন। অপুর পিতা অসিত দাস ছোট বেলা থেকেই জুতা সেলাই- ও কালি করার কাজ করে থাকেন। তিনি বর্তমানে মনিরামপুর বাজারের রাজগঞ্জ মোড়ে রাস্তার পাশে চটের উপর বসে জুতা সেলাই ও কালি করার কাজ করছেন। জমি- জমা বলতে নিজের পৈতৃক ভিটেটুকুও নেই তাদের। সহায় সম্বলহীন অপুর পিতা অসিৎ দাস কাজের খোঁজে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে প্রায় ৪০ বছর আগে খুলনার ডুমুরিয়া থেকে মনিরামপুরে এসেছিলেন। কাজ করতে করতে ওই গ্রামের সাধনা দাসকে বিয়ে করে
এখানেই থেকে যান অসিৎ দাস। শ্বাশুড়ীর দেওয়া তিন শতক জমির উপর ঘর বেঁধে বসবাস করছেন অপুরা। অপুর বড় ভাই তিতাস দাসও খুব মেধাবী । তিনি মনিরামপুর বাজারের একটি ইলেকট্রনিক্সের দোকানে কর্মচারীর কাজ করেন এবং একি সাথে তিনি কেশবপুর সরকারী কলেজে রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়া-লেখা করছেন।অপু দাস ছোট বেলা থেকেই কৃতিত্বেও স্বাক্ষর রেখেছেন সবখানে। স্থানীয় খানপুর ঋষি পল্লীর ব্রাক সেন্টার থেকে ৫ম শ্রেনি পাশ করে মনিরামপুর সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন।সেখান থেকে ২০২০সালে এসএসসি ও মনিরামপুর সরকারী কলেজ থেকে ২০২২ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫.০০ পেয়ে উত্তীর্ন হন।এরপর চলতি ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৭৫ নম্বর পেয়ে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পান।
অপুর মেডিকেলে চান্স পেয়ে অর্থের অভাবে শান্তার চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন ভেস্তে যাবে? এই দুশ্চিন্তায় পড়ে পরিবার ও শুভাকাঙ্খীরা। তাদের এই দুশ্চিন্তার অবসান ঘটাতে পাশে দাঁড়িয়েছে বসুন্ধরা শুভসংঘ।
হাস্যেজ্জ্বল অপু বলেন, ‘চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন প্রায় শেষ হয়ে গেছিলো। ভালো কয়েকজন মানুষের সহায়তায় ভর্তি হতে পেরেছি, এখন ৫ বছরের কোর্স এবং ১ বছরের ইন্টার্নশিপের ব্যয়ভার যিনি মেটাতে চেয়েছেন তিনি আমার জীবনে ভগবানের সমান।’
অপুর মা সাধনা রাণী আনন্দে চোখ ছলছল করছে। তিনি জানান, এতোদিন কষ্ট ক্লেশ করে ছেলেকে এই পর্যন্ত এনেছি। এখন আপনারা এগিয়ে আসলেন আমার আর কোন কষ্ট থাকবে না, আপনাদের প্রতি আমাদের পরিবার সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে।
অপুর প্রতিবেশী সম্পর্কে ভাই মিলন দাস বলেন, অনেক কষ্ট স্বীকার করে অপুর বাবা-মা তাকে এ পর্যন্ত এনেছেন। আমাদের এই মেধাবী ছেলের পাশে বসুন্ধরা শুভসংঘ এগিয়ে এসেছে, এটা অনেক বড় খবর। এভাবে ভালো কাজে এগিয়ের যাক তারা। এই সহায়তা ছাড়া অপুর ডাক্তার হওয়া কষ্টের ছিলো।
দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক কথা সাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ‘অর্থের অভাবে কোনো মেধাবী শিক্ষার্থীর যেন লেখাপড়া বন্ধ না হয় তার জন্য বসুন্ধরা শুভসংঘ সবারই পাশে থাকতে চায়। শিশুদের স্বপ্ন অর্থাভাবে আমরা শেষ হতে দিতে চাই না। সব ভালো কাজের সাথেই আছে বসুন্ধরা শুভসংঘ।’