বারেকটিলায় আলো ছড়াচ্ছে বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুল

যাতায়াতে দুর্গম দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার মেঘালয় সীমান্তবর্তী বারেকটিলা। বিদ্যালয়বিহীন ওই টিলায় শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুল। মেঘালয়ের খাসিয়া পাহাড় ও যাদুকাটা তীরের বারেকটিলার মোহনীয় সৌন্দর্য্য দেখতে প্রতিদিন ছুটে আসেন হাজারো মানুষ। কিন্তু প্রায় চার শ ফুট উঁচু ওই টিলার বাসিন্দা ৫ শ পরিবারের শিশুদের লেখাপড়ার জন্য কোনো বিদ্যালয় নেই। টিলার নিকটবর্তী একমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও ওই টিলা থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। টিলার অধিকাংশ শিশুরা বিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পায় না। ২০২৩ সালে বারেকটিলা বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুল চালু করায় ওই টিলার ৫ শ পরিবারের শিশুদের শিক্ষালাভের পথ সুগম হয়েছে।

বারিকটিলার বাসিন্দা আলা উদ্দিন বলেন, বাড়ির নিকটবর্তী স্কুল না থাকায় ৩ মেয়ে ও ২ ছেলের কেউ বিদ্যালয়ে পড়ালেখার সুযোগ পায়নি। বারিকটিলা বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুল চালু করায় আমার নাতি নিশান ডিও কে গত বছর প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করেছিলাম। নাতি এখন বিদ্যালয়টিতে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তিনি আরও জানান, বিদ্যালয়ে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পাঠদান চলে। স্কুল ড্রেস, ব্যাগ, খাতা, কলম, পেন্সিল, রাবারসহ সকল শিক্ষা উপকরণ উপহার হিসেবে ওই স্কুল থেকে পেয়ে থাকে বিদ্যালয়টির ছাত্রছাত্রীরা। শীতকালে সকল শিশুকে একটি করে কম্বলও দিয়েছে।

বারেকটিলা ‘আনন্দপুর পাড়া’ বাসিন্দা মালবিকা আজিম। টিলাটির ওই পাড়ায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের ২৮ পরিবার বসবাস করে। মালবিকা আজিম বলেন, ছেলে ইক্কন আজিম বসুন্ধুরা শুভসংঘ স্কুলে পড়ে। বাড়ির পাশে বিদ্যালয় হওয়াতে আমরা অনেক খুশি। শিশুরা টিলা বেয়ে ওঠানামা করে দূরের সরকারি স্কুলে যাইতে পারে না।
বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেনির ছাত্রী সিলভা সাংমা নিয়ম মেনে প্রতিদিন স্কুলে যাচ্ছে। সে জানায়, বাড়ির পাশে বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুল। অনেক ভালো লাগে স্কুলে যেতে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পূর্ব দিকে রুপ আর সম্পদের জন্য দেশ বিখ্যাত যাদুকাটা নদী , উত্তরে মেঘালয়ের খাসিয়া পাহাড়। অন্য দুইপাশে মাহারাম নদী ও হাওর। মাঝখানে প্রায় ৪ শ ফুট উঁচু টিলাটি হচ্ছে দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র বারেকটিলা। ওই টিলাতে ৫ শ পরিবারে ৩ হাজারের অধিক লোকসংখ্যা বসবাস করে। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে উত্তর বড়দল ইউনিয়নে এর অবস্থান। বারেকটিলার আয়তন ৩৬৫ একর। ১৯৬৫ সাল থেকে কয়েকটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পরিবার এখানে বসবাস করে। ১৯৮৮ সাল ভয়াবহ বন্যা হলে বারেকটিলায় আশেপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে সমতলের বাসিন্দারা এসে নতুন বসতি গড়ে বসবাস করতে শুরু করে ।

বারিকটিলার বাসিন্দা একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মনির আজিম বলেন, টিলার বাসিন্দা অধিকাংশ পরিবারই দরিদ্র। শিক্ষার প্রতি সচেতনতা বাড়লেও শিশুদের বিদ্যালয়ে যাতায়াতে সময় দিতে পারে না। তাছাড়া এত উঁচু টিলা বেয়ে দূরের বিদ্যালয়ে যাতায়াত শিশুদের জন্য অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। বাড়ির পাশে বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুল হওয়াতে শিশুদের শিক্ষালাভ অনেক সহজ হয়েছে। বসুন্ধরাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
বসুন্ধরা শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান বলেন, বিদ্যালয়বিহীন দুর্গম এলাকায় পরিচালিত বারেকটিলা বসুন্ধরা শুভসংঘ বিদ্যালয়টিতে এলাকার শিশুরা পড়ালেখার সুযোগ পাচ্ছে। এটাই বসুন্ধরা শুভসংঘের সার্থকতা।
স্থানীয় বাসিন্দা তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, সুনামগঞ্জ জেলা কৃষকদলের আহবায়ক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক আনিসুল হক বলেন, বিদ্যালয়বিহীন বারেকটিলায় বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুল করায় অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। বারেকটিলায় শিক্ষার আলো ছড়াতে এটি একটি মহতী উদ্যোগ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *