বগুড়ায় দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত সুরমীর পাশে দাঁড়ালো বসুন্ধরা শুভসংঘ
একাধারে ডায়াবেটিক, কিডনী, চোখে রক্তক্ষরণে অন্ধত্ব, উচ্চ রক্তচাপ আর মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত সুরমী আক্তার(২৩)। সুরমী যখন এতোসব রোগে আক্রান্ত, সেসময়ই দুই কিডনী নষ্ট হয়ে মারা যায় তার মা নূর জাহান বেগম। ছোট মেয়ে আর স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে গিয়ে সুরমীর বাবা আজগর আলীকে একে একে বিক্রি করতে হয় দুটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা, লোহা-লক্করের (ভাঙড়ি) ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন এখন সুরমীর চিকিৎসা ব্যয়ই ৫০০ টাকার ওপরে। এই করতে গিয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন আজগর আলী। একমাত্র বসতবাড়ি ছাড়া এখন আর কিছুই অবশিষ্ট নেই তার, বয়সের কারণে নিজের উপার্জনও শুণ্যের কোঠায়। ফলে মেয়ের ব্যয়বহুল চিকিৎসা নিয়ে শঙ্কায় দিন কাটছিলো তাঁর। বিষয়টি জানতে পেরে সুরমী ও তার বাবার পাশে দাঁড়ালো বসুন্ধরা শুভসংঘ। তাঁর চিৎিসার জন্য নগদ অর্থ সহায়তার পাশাপাশি প্রতিমাসে চিকিৎসা খরচের ঘোষনা দিয়েছে শুভসংঘ।
বগুড়া শহরের নিশিন্দারা মন্ডলপাড়ার বাসিন্দা আজগর আলী। দুই মেয়ের মধ্যে বড় মৌসুমী খাতুনের বিয়ে দিয়েছেন। সুরমী ২০২০সালে যখন বগুড়া পালি টেকনিক ইন্সটিটিউটে রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং টেকনোলজি (আরএসি) বিভাগের সমাপনী পরীক্ষা দেয় সেসময় চরম অসুস্থ হয়ে পড়ে। আজগর আলী জানান, ২০০৯ সাল থেকেই সুরমী ডায়াবেটিক রোগে আক্রান্ত ছিলো। স্ত্রী অসুস্থ থাকায় মেয়ের চিকিৎসায় তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি সেসময়। এরই মাঝে চরমভাবে অসুস্থ হলে মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরই মাঝে চোখে রক্তক্ষরণ শুরু হয়, ধীরে ধীরে বহুবিধ রোগ ধরা পড়ে। আর সেসবের চিকিৎসা করাতে গিয়ে ক্রমান্বয়ে তিনি নিঃস্ব হয়ে পড়েন। এরই মাঝে ২০২০ সালের জুন মাসে স্ত্রীর মৃত্যুতে পরিবারে নেমে আসে অন্ধকার। একদিকে মেয়ের চিকিৎসা, অপর দিকে তার যাবতীয় সেবা-স্রুসুষা আর রান্নাবান্না এবং মেয়েক খাওয়ানো সবই সামলাতে হয় তাঁকে। ফলে অর্থ উপার্জনের জন্য যে বাইরে বের হবেন, সেই সময় টুকুও থাকেনা। এদিকে সম্বল বলতে যা কিছু ছিলো সবই শেষ হয়ে যায়। ফলে এখন প্রায় বিনা চিকিৎসায় দিন কাটতে শুরু হয় সুরমীর। এই পরিস্থিতিতে সুরমীর চিকিৎসা সহায়তায় হাত বাড়ায় বসুন্ধরা শুভসংঘ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বসুন্ধরা শুভসংঘের পক্ষে এককালীন অর্থ সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি মাসিক চিকিৎসা সহায়তার ঘোষণা দেওয়া হয়। শুভসংঘ বগুড়া জেলা শাখার প্রধান উপদেষ্টা আলহাজ্ব মোস্তফা মাহমুদ শাওন ও সভাপতি ডা. সিরাজুল হক ফাইন নগদ অর্থ তুলে দেন আজগর আলীর হাতে। এসময় বগুড়া শুভসংঘের সহ-সভাপতি মাহমুদুন্নবী রাসেল, সাধারণ সম্পাদক আশফাক উর রহমান চন্দন, সজিবসহ অন্যান্য শুভার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
বগুড়া শুভসংঘের সাধারণ সম্পাদক আশফাক উর রহমান চন্দন জানান, প্রতিমাসে সুরমীর চিকিৎসার জন্য ৩হাজার টাকা করে অর্থ সহায়তা প্রদান করবে বসুন্ধরা শুভসংঘ।