দরিদ্র শান্তার ডাক্তার হবার স্বপ্ন বাচাতে এগিয়ে এলো বসুন্ধরা শুভসংঘ।
২ মার্চ দৈনিক কালেরকন্ঠ পত্রিকায় শান্তার মেডিকেলে পড়াশোনা খরচ নিয়ে দুশ্চন্তা সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি দেখেই কালেরকন্ঠ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন বসুন্ধরা শুভসংঘ এর মাধ্যমে এই ঘোষনা দেন।
রবিবার(৩মার্চ) দুপুরে এই খবর পৌছে দিতে শুভসংঘের পক্ষে কালেরকন্ঠ প্রতিনিধি হাজির হন নড়াইল সদরের বড়মিতনা গ্রামে দিনমজুর শিবু সেনের বাড়িতে।
ছোট্ট একটি টিনের ঘর সেখান থেকে বেরিয়ে এলেন শিবু সেন। বাড়ির সামনে একটি লাউয়ের মাচার নিচে চেয়ারে বসতে দিলেন। পরের কৃষি ক্ষেতের ফসল পরিচর্চা করে মাত্র বাসায় ফিরেছেন। শান্তার মা শিবানী সেন বাড়িতে নেই তিনি দুধ বিক্রি করতে গেছেন রূপগঞ্জের হাটে। শান্তা বেরিয়ে এলো মলিন মুখে। শান্তার বাবাকে ডেকে বলা হলো বসুন্ধরা শুভসংঘের এগিয়ে আসার কথা। তখন বাবা আর মেয়ে দুজনের মুখেই হাসির রেখা বেরিয়ে এলো। কথা বলতে বলতে জানা গেলো পরিবারের একটি মাত্র ফোন যা শান্তার মা’র কাছে থাকে। তাদের পরিবারে কোন ব্যাংক হিসাবও নেই। শান্তার মা আগেই খবরটি জেনেছেন তাই তড়িঘড়ি করে বাড়িতে ফিরেছেন। আজ তাদের মন থেকে মেয়ের লেখাপড়া খরচের শংকা দুর হয়েছে।
নড়াইল সদর উপজেলার তুলারামপুর ইউনিয়নের মিতনা গ্রামের দরিদ্র কৃষি শ্রমিক শিবু সেন ও শিবানী সেনের এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে সমিরণ ও কন্যা শান্তাকে লেখাপড়া শেখাতে গিয়ে বাবার একমাত্র সম্বল ২৫ শতাংশ ফসলি জমি ৪ বছর আগে বিক্রি হয়,শুধু বাড়ির ৫শতাংশ জমি অবশিষ্ট রয়েছে। বাবা অন্যের জমিতে শ্রম বিক্রি করে। মা গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি থেকে গরুর দুধ সংগ্রহ করে প্রতিদিন দীর্ঘ ১২ মাইল অতিক্রম করে নড়াইল শহরে এসে বিক্রি করে। একমাত্র ভাই সমিরণ নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজে অনার্স পড়ার ফাঁকে ফাঁকে টিউশনি করেও বোনের লেখাপড়ায় সহায়তা করছে।
এসএসসিতে সদরের চাঁচড়া নাছেল উদ্দিন বিশ^াস মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এবং এইচএসসিতে নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে পাবনা সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছে। তার মেডিকেলে ভর্তি হবার টাকাও জোগাড় হয়েছে স্থানীয় মিতনা গ্রামের কয়েকজন লোকের চেষ্টায়।
তাহলে কি অর্থের অভাবে শান্তার চিকিৎসক হবার স্বপ্ন ভেস্তে যাবে? এই দুশ্চিন্তায় পড়ে পরিবার ও শুভাকাঙ্খীরা। তাদের এই দুশ্চিন্তার অবসান ঘটােেত পাশে দাড়িয়েছে বসুন্ধরা শুভসংঘ।
হাস্যেজ্জ্বল শান্তা জানান,আমার চিকিৎসক হবার স্বপ্ন প্রায় শেষ হয়ে গেছিলো। আত্মীয় আর ভালো কয়েকজন মানুষের সহায়তায় ভর্তি হতে পেরেছি,এখন ৫ বছরের কোর্স এবং ১
বছরের ইন্টার্নশিপ এর ব্যয়ভার যিনি মেটাতে চেয়েছেন তিনি আমার জীবনে ভগবানের সমান।
শান্তার মা শিবানী সেন আনন্দে চোখ ছলছলন করছে। জানান, এতোদিন দুধ বিক্রি করে অর্থ সংগ্রহ করে মেয়েকে এই পর্যন্ত এনেছি। এখন আপনারা এগিয়ে আসলেন আমার আর কোন কষ্ট থাকবে না,আপনাদের প্রতি আমাদের পরিবার সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে।
শান্তার চাচা বিপুল সেন বলেন, অনেক কষ্ট স্বীকার করে শান্তার বাবা-মা তাকে এ পর্যন্ত এনেছেন। আমাদের এই মেধাবী মেয়ের পাশে বসুন্ধরা শুভসংঘ এগিয়ে এসেছে,এটা অনেক বড় খবর। এভাবে ভালো কাজে এগিয়ের যাক তারা। এই সহায়তা ছাড়া শান্তার ডাক্তার হওয়া কষ্টের ছিলো।
দৈনিক কালেরকন্ঠ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক কথা সাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন বলেন,অর্থের অভাবে কোন মেধাবী শিক্ষার্থী র যেন লেখাপড়া বন্ধ না হয় তারজন্য বসুন্ধরা শুভসংঘ সবারই পাশে থাকতে চায়। শিশুদের স্বপ্ন অর্থাভাবে আমরা শেষ হতে দিতে চাই না। সব ভালো কাজের সাথেই আছে শুভসংঘ।