‘তরুণদের নতুন বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভা
তরুণ প্রজন্মের হাত ধরে বাংলাদেশ নতুন করে স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীনতার পর অন্তবর্তীকালীন সরকার শিক্ষার্থীদের নিয়ে নানা ধরনের সংস্কারের কথা ভাবছে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীরাও দেশকে নানা ধরণের সংস্কার করার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের মতামত দিচ্ছে। নতুন দেশকে নিয়ে শিক্ষার্থীদের চিন্তা-ভাবনা জানতে বসুন্ধরা শুভসংঘ প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি সমন্বিত শাখা আহ্বাযক কমিটির আয়োজনে আজ রবিবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে বসুন্ধরা গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে ১৩ টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহনে ‘তরুণদের নতুন বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় শিক্ষার্থীরা নতুন দেশকে নিয়ে নানা ধরনের ভাবনার কথা তুলে ধরেন।
আলোচনা সভায় বসুন্ধরা শুভসংঘ পরিচালক ও কালের কণ্ঠের জ্যেষ্ঠ সহ সম্পাদক জাকারিয়া জামানের সঞ্চালনায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন। আরও উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের সিনিয়র অফিসার (কোওর্ডিনেশন) মো. মামুন, বসুন্ধরা শুভসংঘ কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক শরীফ মাহদী আশরাফ জীবন, কর্ম ও পরিকল্পনা সম্পাদক নিয়াজ মোর্শেদ আবির ও কার্যকরী সদস্য ফেরদৌস আলম সজীব।
আলোচনা সভায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ’র মাউন বিল্লাহ ও তাওহীদ সরকার, সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের রানা সরকার, গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফয়সাল আহমেদ ও আশরাফুল ইসলাম সাজ্জাদ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজি’র শাহ্ মো. হাসিবুর রহমান হাসিব ও শাইমুল আজাদ চয়ন, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ’র তাহমিদ আরেফিন সাজিদ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’র বায়েজিদ হুসাইন, নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ’র ইমরোজ মাহমুদ রুদ্র, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ’র ইরিন আক্তার, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেরস এগ্রিকালচার এন্ড টেকনোলজি’র দীপ্ত পাল ও নাফিজ হাসান, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’র ওয়াসিম আকরাম, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির মুনিরা প্রিয়ন্তি, রুবায়েত হোসেন ও সামিয়া স্পর্শিয়া, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি’র মুরশীদ আলম রাব্বি ও হাবিবুল্লাহ দেওয়ান শিশির।
শিক্ষার্থীদের বক্তব্য পর্বে সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রানা সরকার বলেন, তরুণ সমাজের দায়িত্ব শিক্ষিত সমাজ তৈরীতে মনোনিবেশ করা। আমাদের দেশে এখনো অনেক শিশু আছে যারা লেখাপড়ার সুযোগ পায় না এবং গ্রামাঞ্চলে অনেক শিক্ষার্থী টাকার অভাবে শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমাদের উচিত প্রত্যেকের জায়গা থেকে ‘সবার জন্য শিক্ষা’- এই নীতি বাস্তবে রূপ দেওয়া। আজকের তরুণ সমাজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করার পরও চাকরির পাচ্ছে না। সরকারের উচিত দেশের সকল শিক্ষার্থীর জন্য বাধ্যতামূলক কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করা পাশাপাশি বিভিন্ন কর্মমূখী শিক্ষার ব্যবস্থা করা যাতে করে শিক্ষাথীরা পড়ালেখাকালীন সময়ে এবং চাকরির জন্য বসে না থেকে অনলাইনে বিভিন্ন প্লাটফর্মের মাধ্যমে কাজ করতে পারে। উন্নত দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও শিক্ষার্থীদের জন্য খন্ডকালীন চাকরির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যাতে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ার পাশাপাশি দক্ষতা অনুযায়ী কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে।
অন্যদিকে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম সাজ্জাদ বলেন, ইদানীং দেখা যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা গ্রাজুয়েশন শেষ করার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য দেশের বাইরের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাচ্ছে এবং সেই দেশের তারা কর্মক্ষেত্র তৈরী করে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। যার ফলে দেশের মেধা বাইরে চলে যাচ্ছে। এর প্রধান কারণ হতে পারে দেশের পর্যাপ্ত পরিমানে গবেষনার সুযোগ নেই। দেশে যদি পর্যাপ্ত গবেষনার পরিবেশ থাকত তাহলে শিক্ষার্থীরা দেশকে তাদের মেধা দিয়ে অনেক দূর এগিয়ে নিতে পারত। বাংলাদেশের উন্নত চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল হওয়ায় বর্তমানে অনেক মানুষ চিকিৎসার জন্য আমাদের পার্শ্ববর্তী অনেক দেশে পাড়ি জমায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে পর্যাপ্ত গবেষনার মাধ্যমে দেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানের অধুনিকায়নের মাধ্যমে আামদের এই সমস্যা দূরীকরণ সম্ভব তার জন্যে তরুণ সমাজের মতামতকে মূল্যায়ন ও তাদের গবেষনার পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা তৈরী করে দিতে হবে।
তরুণদের নতুন বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভায় তরুণদের উদ্দেশ্যে ইমদাদুল হক মিলন বলেন, আমি সবসময় তরুণদের সঙ্গে চলতে পছন্দ করি। তরুণেরা একটা দেশকে এগিয়ে নেয়। তরুণেরাই দেশ তৈরি করে। মানুষ তৈরি হলেই দেশ তৈরি হয়। বাংলাদেশে যা কিছু গৌরবের ইতিহাস দেখি, সবকিছুর মূলেই ছিল ছাত্ররা। আগামীর বাংলাদেশও তৈরি হবে ছাত্রদের হাত ধরে।
এসময় বসুন্ধরা শুভসংঘের কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি বলেন, বসুন্ধরা শুভসংঘ থেকে প্রতিমাসে ১০০০ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। করোনাকালে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আটচল্লিশ হাজার পরিবারকে একমাসের খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন জেলায় হাজারের অধিক গ্রামীন নারীকে বসুন্ধরা শুভসংঘ প্রশিক্ষন কেন্দ্রের মাধ্যমে সচ্ছল করার লক্ষ্যে সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপশি সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি অতি দরিদ্র গৃহহীনদের ঘর তৈরি করে দেওয়া, অসচ্ছল পরিবারকে দোকান করে দেওয়া, গৃহপালিত পশুপাখি বিতরণসহ নানারকম মানবিক কাজ বসুন্ধরা শুভসংঘ করে চলছে। ভবিষ্যতেও এসব কর্মকান্ড অব্যাহত থাকবে।