খুবে কষ্টে আছি , না পারি বলতে আর না পারি চাইতে ! স্বার্থ ছাড়া কেউ খবর রাখেনা বসুন্ধরা চেয়ারম্যানের জন্য আশির্বাদ রইলো
খুবে কষ্টে আছি , না পারি কারো কাছে বলতে আর না পারি সাহায্য চাইতে ! স্বার্থ ছাড়া খাদ্য দান তো দুরের কথা, খবরও পুছে না ! হামারা কেনং আছি , খায়ে আছি নাকি – না খায়ে আছি কোনদিন কাহ সেই কথা পুছে (জানতে চাওয়া) না। হামরা গ্রামের মূর্খ গরিব মানুষ, হামার খবর কাহ নেয় না দাদা! এলা বরষা কাল কোন কাজ কাম নাই। মানুষের বাড়িতে গান গায়ে হানে কিছুটা আয় হছিল, কিন্তু বৃষ্টি বাদলা দিনের তানে সেইটাও বন্ধ আছে। বসুন্ধরার মালিক ( চেয়ারম্যান) টার তানে হামা (আমি) অনেক আশির্বাদ করিমো। মালিকটা যেনো সুস্থ থাকে আর যুগ যুগ বাঁচে। বসুন্ধরা চেয়ারম্যানের একমাসের খাদ্যসামগ্রী উপহার পেয়ে এভাবেই নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন ঠাকুরগাঁও পীরগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা কোষারানীগঞ্জ কোষাবিলপাড়া গ্রামের লোকসঙ্গীত শিল্পী টেপরি মাতাজি ।
শুক্রবার সকালে বসুন্ধরা শুভসংঘের এসব খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়া হয় টেপরি মাতাজির হাতে। খাদ্য সহয়িতায় ছিল ২০ কেজি চাল, তিন কেজি আটা, দুই লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি মুসুর ডাল, চিনি, চিড়–া. মুড়ি, লবন, গোসল ও কাপড় কাচা সাবান, পাউডার, দুই প্যাকেট সেমাই , চার কেজি আলু পোটল ও অন্যান্য সবজি।
টেপরি মাতাজি আরো বলেন, কষ্ট করে কোনমতো বেচেঁ আছি। রাতে খাবার খেয়ে ঘুমাতে গেলে পরের দিন পেটে কি করে দুবেলা খাবার জুটবে সেই দু:চিন্তায় ঘুম আসে না। বর্ষা কাল চলছে, বৃষ্টি পড়লে বেড়ার ঘরে পানি পড়ে ভিজে যায়। তখন আর ঘুমাতে পারিনা, ডেকচি পাতিল ও পালাষ্টিক জোড়াতালি দিয়ে বুষ্টির পানি বন্ধ করতে হয়। গ্রামে গ্রামে মানুষের বাড়িতে গান কির্তন করে যে দুইচার টাকা পাই তা দিয়ে তিনবেলা খাবার খরচ যোগান কষ্ট হয়। তার উপর এখন বর্ষাকাল হওয়ায় গান গাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আবহাওয়া শুস্ক না হওয়া পর্যন্ত অনেক কষ্ট করে চলতে হবে। এমন সময় বসুন্ধরার চেয়ারম্যানের পুরো একমাসের খাদ্য সামগ্রী উপহার আমার পরিবারের সকলের দু:শ্চিন্তা কাটিয়ে মুখে হাসি ফুটিয়েছে। জীবনে একসাথে এতো খাবার কেউ কোনদিন দেয় নাই। চেয়ারম্যান স্যারের যেন মঙ্গল হয়, তিনি যেন ভালো থাকেন এই আশির্বাদ করছি।
ঠাকুরগাঁওয়ের বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব প্রফেসর মনোতোষ কুমার দে বলেন, সারাদেশে বসুন্ধরা শুভসংঘ মানুষের জন্য যে মানবিক কাজগুলো করে যাচ্ছে তা অবশ্যই প্রশংসনীয়। টেপরি মাতাজি সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রত্যেকের পারিবারিক গারস্থ জীবনে যে ভাব বিনিময় অন্তরঙ্গ ভাবে হয়ে থাকে তার প্রধান মাধ্যম আঞ্চলিক ভাষা। এরমাধ্যমে নিজের মনের কথা খুব সহজেই বলা যায় এবং তাতে প্রকৃতির যোগ স্থাপিত হয়। কিন্তু কালের বিবর্তণে আঞ্চলিক ভাষা চর্চা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। অনেক কষ্ট করে হলেও টেপরি মাতাজি তার সৃষ্টির মাধ্যমে আঞ্চলিক ভাষার চর্চা ছড়িয়ে দিচ্ছেন। নিতান্তই দারিদ্রতার কারণে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ হয়ে উঠেনি টেপরি মাতাজির। তারপরও আঞ্চলিক ভাষায় রচিত তাঁর সৃষ্টি শত শত গান রয়েছে। যেগুলো মা , মাটি ও প্রকৃতির কথা বলে। শিল্পসংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমেও আঞ্চলিক ভাষা ভূমিকা রাখে, টেপরি মাতাজি তেমনি এই অঞ্চলের দৃষ্টান্ত। বসুন্ধরা শুভসংঘ এই গুণী শিল্পীকে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে যা খুবই প্রশংসনীয়। প্রত্যন্ত এলাকার এই গুণী শিল্পী কুড়ে ঘরে অনেক কষ্টে বসবাস করেন। বসুন্ধরা শুভসংঘ সারাদেশে হাজার হাজার মানুষকে সহযোগীতা করে চলেছে, যা দেশের মানুষ জানেন। বসুন্ধরা গ্রæপের চেয়ারম্যান ও জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন এই গুণী শিল্পীর একটি গৃহের ব্যাবস্থা করে দিলে এই অঞ্চলের মানুষ ও শিল্পী সমাজ চিরদিন কৃতজ্ঞ থাকবে।
শুভসংঘ জেলা কমিটির সভাপতি তাপস দেব নাথ বলেন, দেশ ও মানুষের মঙ্গলে বসুন্ধরা শুভসংঘ ঠাকুরগাঁয়ের সকল সদস্য খুবই আন্তরিক। দির্ঘ দিন ধরেই বসুন্ধরা শুভসংঘ এই জেলায় বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করে যাচ্ছে এবং আগামীতেও করে যাবে।
খাদ্যসহায়তা অনুষ্ঠানে বসুন্ধরা শুভসংঘের ঠাকুরগাঁও জেলা কমিটির সভাপতি তাপস দেব নাথ, সাধারন সম্পাদক রাশেদুল আলম লিটন, মীর ছানোয়ার হোসেন ছানু, সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় শাখা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহফুজা ফারিহা মারজান ও কালের কন্ঠ জেলা প্রতিনিধি পার্থ সারথী দাস সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।